শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই লেবুর উপকারি গুণাগুণ মানুষের
জানা। এর মাঝে একটা প্রধান উপকারিতা হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ বালাই দূরীকরণ এবং শরীরের
সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। আরেকটা হলো হজম শক্তি বাড়ানো এবং যকৃৎ পরিষ্কারের মাধ্যমে
ওজন কমানোর ক্ষমতা। লেবুতে সাইট্রিক এসিড এর পাশাপাশি আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বায়োফ্লাভোনোয়েড, পেক্টিন এবং লিমোনিন। এই সবগুলো পদার্থের প্রভাবেই আমাদের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং রোগের সাথে শরীর যুদ্ধ করার শক্তি পায়। সকালে
এক গ্লাস গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে এসব উপকার সর্বাধিক মাত্রায়
পাবে আপনার শরীর। গরম পানি কেন? কারণ ঠাণ্ডা পানির চাইতে গরম পানি শরীরে শোষিত হয় অনেক
দ্রুত এবং এর থেকে তত বেশি উপকৃত হবেন আপনি। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেকটা
লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। আর সকালে উঠে অন্য যে কোনও কাজ করার আগেই এটা পান করবেন। তাহলেই
পাবেন এর অসাধারণ সব উপকারিতা।
১) হজমে সহায়ক :
শরীর থেকে অযাচিত পদার্থ এবং টক্সিন বের করে দেয় লেবুর রস। আমাদের
হজমের জন্য ব্যবহৃত লালা এবং পাচক রসের সাথে বেশ মিল আছে এর গঠন এবং কাজের। আর
যকৃতের থেকে হজমে সহায়ক এক ধরণের পদার্থ নিঃসরণেও এটি সহায়তা করে।
২) ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে :
শরীরে মুত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর মাধ্যমে খুব দ্রুত
ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এছাড়া
মূত্রনালির স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এটি সহায়ক।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :
লেবুতে থাকে অনেকটা ভিটামিন সি এবং লৌহ যা ঠাণ্ডাজ্বর জাতীয়
রোগের বিরুদ্ধে ভীষণ কার্যকর। এতে আরও আছে পটাসিয়াম যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে
এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যাসকরবিক এসিড প্রদাহ দূর করে এবং অ্যাজমা বা
এজাতীয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমায়। এছাড়াও কফ কমাতে সাহায্য করে লেবু।
৪) শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে :
এর অর্থ হলো শরীরের অম্ল-ক্ষারকের মাত্রা ঠিক রাখে লেবু। লেবু
হজম হয়ে যাবার পর কিন্তু আর অম্লীয় থাকে না, ক্ষারীয় হয়ে যায়। ফলে এটি রক্তে মিশে যায় এবং শরীরের
অম্লতা বাড়তে দেয় না। অম্লতা বেড়ে গেলেই দেখা দেয় রোগ।
৫) ত্বক পরিষ্কার করে :
ত্বকের কুঞ্চন এবং দাগ দূর করে লেবুতে থাকা বিভিন্ন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য খুব দরকারি হল ভিটামিন সি। ব্রণ বা
অ্যাকনি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এটি দূর করে। আর
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও এটি কার্যকরী।
৬) আপনার মন ভালো করে দেয় :
সকালেই প্রাণচাঞ্চল্য বাড়িয়ে দিতে এর জুড়ি নেই। খাবার
থেকে শক্তি শোষণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় লেবু। আর এর গন্ধে আপনার মন ফুরফুরে হয়ে
উঠবে নিমিষেই। দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা দূরীকরণেও এটি অসামান্য।
৭) সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে :
ক্ষতস্থান সেরে তুলতে সাহায্য করে অ্যাসকরবিক এসিড। আর
হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও এটি সহায়ক। স্ট্রেস এবং যে কোনও ধরণের ব্যাথার
উপশম করে ভিটামিন সি।
৮) নিঃশ্বাসে আনে তরতাজা ভাব :
নিঃশ্বাসে লেবুর সতেজতা আনা ছাড়াও, এভাবে গরম পানির সাথে লেবুর রস পানে দাঁতের ব্যথা এবং
জিঞ্জিভাইটিসের উপশম হয়। তবে এটা পানের পর পরই দাঁত ব্রাশ করবেন না কারণ সাইট্রিক
এসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলে। আগে দাঁত ব্রাশ করে তার পর এটা পান করা ভালো। আর
লেবুপানি পান করার পর বিশুদ্ধ পানি খেতে পারেন এক গ্লাস।
৯) শরীরে তরলের পরিমাণ ঠিক রাখে :
রাতে ঘুমানোর সময়ে যে পানি খরচ হয় সেটা পূরণ হয়ে যায় সকাল
সকাল এই এক গ্লাস পানি পানের মাধ্যমে।
১০) ওজন কমাতে সহায়ক :
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পেক্টিন থাকে। আঁশজাতীয়
এই পদার্থ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে রাখে। ফলে ওজন কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের খাবারে এমন অম্লজাতীয় খাবার কম থাকে তাদের ওজন বাড়ে বেশি।