শীতে আবহাওয়া আর্দ্র হয়ে যায়। তাই ত্বক
শুষ্ক হয়ে পড়ে। এই সময়ে ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। অনেকেই
রয়েছেন, যাঁরা শীতে গোসল করা একটু
কমিয়ে দেন। বিষয়টি ভালো না খারাপ, এ নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ আলী। আজ ৫ ডিসেম্বর
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য
প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২২২৬তম পর্বে
আলোচনাটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : শীতে ত্বক ভালো রাখার জন্য কী করব, এই বিষয়ে আমরা খুব দ্বিধায় থাকি। কারণ গরম
থেকে শীত আসছে। আবহাওয়ায়
একটি পরিবর্তন হচ্ছে। ত্বক ভালো রাখার জন্য এ সময় কী করণীয়?
উত্তর : এই সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক
শুষ্ক হয়ে যায়। মূল পরিবর্তন এটি হয়।
শুষ্ক হওয়ার পর ত্বক খসখসে হয়ে যায়। যাদের
ত্বক এমনিতেই শুষ্ক, তাদের
ত্বক ফেটেও যেতে পারে। অনেকেরই ত্বক ফাটা ফাটা হয়ে যায়। এমনকি
যাদের বেশি শুষ্ক ত্বক, তাদের
ত্বক ফেটে রক্তও বের হয়। যেমন অনেকেই শীতের দিনে পা ফাটার সমস্যায় ভোগে। হয়তো
রোগী বলে আমি গরমের দিনে ভালো থাকি, শীত এলে আমার এই সমস্যা বেড়ে যায়। কেবল পা
ফাটা নয়, যেসব রোগ শুষ্কতাজনিত যেমন
একজিমা, সোরিয়াসিস- এই রোগগুলোর
তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়। কারণ, বাতাসের
আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে শুষ্ক হয়ে যায় ত্বক। এই জন্য
আমাদের জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা দরকার।
প্রশ্ন : শীতে গোসল করার মাত্রা অনেকে কমিয়ে দেন। এ বিষয়ে
কী মনে করেন?
উত্তর : গড়পরতা কথা হলো, দিনে গোসল একবার করতে হবে শীতের দিনের জন্য। তবে যদি
কেউ মনে করেন যে তিনি প্রতিদিন না করে একদিন পর পর গোসল করবেন, তাতে খুব বড় রকমের সমস্যা নেই। অনেকে
মনে করেন, শীতের সময়ে
প্রতিদিন গোসল করা ঠিক নয়। এটিও ভুল
ধারণা, এটি ঠিক নয়। প্রতিদিন
গোসল করলেও সমস্যা নেই। আবার যদি কেউ কেউ একটু কমিয়ে দিয়ে একদিন পর পর গোসল করে, এতেও কোনো সমস্যা নেই। মূল কথা
হলো, আমাদের শরীরটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
ও সুন্দর রাখা দরকার।
তবে এখানে পানির একটি বিষয় আসে। অনেকে
গোসলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করে থাকে।
আসলে নিয়মিত অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে
ত্বকের কিছুটা ক্ষতিই হয়। এজন্য পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় করতে হবে। গরম নয়, স্বাভাবিক। বা কুসুম গরম পানি বলতে আমরা যেটা বুঝি, খুবই হালকা গরম অথবা বেশি ঠান্ডা থেকে স্বাভাবিক করতে হবে। তাহলে
ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো। অনেকে অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করে। এটা ঠিক
নয়।
প্রশ্ন : শীতে মাথায় খুশকি বেড়ে যায়। এজন্য
প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু দেওয়ার প্রবণতা থাকে। এটি কি
ঠিক?
উত্তর : আসলে খুশকি শীতে বেড়ে যায়। অনেকেই
রয়েছে যাদের গরমের দিনে কম হয়, শীত
এলে খুশকির প্রবণতা বেড়ে যায়। খুশকি আসলে তরুণ বয়স থেকে শুরু করে একটি বয়স পর্যন্ত খুব
বিব্রতকর সমস্যা। অনেকেরই এই সমস্যা হয়ে থাকে। কারো কম, কারো বেশি মাত্রায় হয়। আসলে এই
জিনিসটিকে কমিয়ে রাখতে হয়। এটি ওষুধ দিলাম আর শেষ হয়ে যাবে, এ রকম বিষয় নয়। বুঝতে হবে যে হঠাৎ ওষুধ খেয়ে নিলেই খুশকি শেষ হয়ে যাবে না। খুশকি
অল্প মাত্রায় হলে, খুশকিবিরোধী
ডাক্তারি শ্যাম্পু আছে, সেই
শ্যাম্পুর উপদেশ দিয়ে থাকি। এতেই কাজ হয়ে যায়।
আর যদি তীব্র মাত্রায় হয়, তাহলে শুধু শ্যাম্পুতে কাজ হয় না। সেই
ক্ষেত্রে মাথায় লাগানোর জন্য একটি ওষুধ আছে, সেটি দিতে হয়। তাতেও না হলে সাথে খাওয়ার ওষুধ দিতে হয়। এটি
তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। তবে একটি কথা বলে রাখি, সারা শরীরে যে অনেক ধরনের চর্মরোগ রয়েছে মাথার ত্বকেও অনেক
ধরনের চর্মরোগ রয়েছে। কারণ মাথার ত্বক একটি বিশেষ ধরনের ত্বক। কাজেই
ওখানে কোনো ধরনের আঁশ উঠলে সাধারণ খুশকি মনে করা ঠিক নয়। কারণ
অন্য চর্মরোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা অন্য রকম হতে পারে।
প্রশ্ন : তাহলে সেটি যে সাধারণ খুশকি নয়, সেটি বোঝার কী কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : অল্প মাত্রায় থাকলে খুশকিই বেশি হয়। যদি খুব
মোটা খুশকি হয় এবং তীব্র আকারে হয়, তাহলে একবার অন্তত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত
নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
প্রশ্ন : শরীরে প্রতিদিন সাবান ব্যবহার করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : বাজারে অনেক ধরনের সাবান রয়েছে। প্রথমত
বড়দের সাবান এবং ছোটদের সাবান। ছোটদের জন্য আলাদা সাবান হয়, বড়দের জন্য আলাদা সাবান হয়। প্রথম
ভাগ হলো এটা। এরপর একেকজনের ত্বক অনুযায়ী সাবান হয়। তৈলাক্ত
ত্বকের জন্য একধরনের সাবান, শুষ্ক
ত্বকের জন্য আরেক ধরনের
সাবান। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এক ধরনের সাবান। এটির
পার্থক্য বুঝতে হবে। যার যার ত্বক অনুযায়ী সেটি ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। তবে শীত
আর গরমের তো একটি পার্থক্য থাকবে। কারণ গরমের দিনে তেল ঘাম শরীর থেকে বেশি বের হয়। শীতের
দিনে সাবানের ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। নয়তো ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে। মোট কথা, শরীর যাতে বেশি শুষ্ক না হয় এবং আর্দ্রতা যাতে বজায় থাকে
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।